খেজুর একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও শক্তিদায়ক ফল, যা মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে জনপ্রিয়। ১০০ গ্রাম খেজুরে সাধারণত প্রায় ২৭৭ থেকে ৩০০ ক্যালরি পর্যন্ত শক্তি থাকে, যা খেজুরের জাত ও আর্দ্রতার পরিমাণের ওপর কিছুটা নির্ভর করে। এই উচ্চ ক্যালরি মূলত আসে খেজুরের প্রাকৃতিক চিনি থেকে—বিশেষ করে গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ, যা দেহকে দ্রুত শক্তি জোগায়। তাই খেজুরকে প্রায়ই প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার বলা হয়। যারা শারীরিক পরিশ্রম বেশি করেন বা খেলাধুলা করেন, তাদের জন্য খেজুর একটি আদর্শ খাবার।
১০০ গ্রাম খেজুরে প্রায় ৭৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা দেহের প্রধান শক্তির উৎস। এতে প্রোটিন প্রায় ২ গ্রাম এবং চর্বি থাকে মাত্র ০.২ গ্রাম, ফলে এটি একধরনের লো-ফ্যাট কিন্তু হাই-এনার্জি খাবার। খেজুরে ফাইবারের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য—প্রায় ৭ গ্রাম পর্যন্ত খাদ্যআঁশ থাকে ১০০ গ্রামে। এই আঁশ হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে এবং অন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। খেজুরে বিদ্যমান ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে বাড়াতে সাহায্য করে, ফলে এটি তুলনামূলকভাবে স্বাস্থ্যসম্মত একটি মিষ্টি বিকল্প।
এছাড়া খেজুরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ। ১০০ গ্রাম খেজুরে পাওয়া যায় ভিটামিন বি৬, নিয়াসিন, রিবোফ্লাভিন এবং প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, যা দেহের বিপাক প্রক্রিয়া ও স্নায়ুতন্ত্রের সুষ্ঠু কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খনিজ উপাদানের মধ্যে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ফসফরাস উল্লেখযোগ্য। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, আয়রন হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ, আর ম্যাগনেসিয়াম পেশী ও স্নায়ুর স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়তা করে।
খেজুরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও প্রচুর পরিমাণে থাকে, যেমন ফ্ল্যাভোনয়েড, ক্যারোটিনয়েড ও ফেনোলিক অ্যাসিড, যা দেহের কোষগুলোকে মুক্ত মৌল বা ফ্রি র্যাডিকালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এই উপাদানগুলো বার্ধক্য প্রতিরোধে এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে খেজুরে ক্যালরির পরিমাণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে, বিশেষ করে যারা কম শারীরিক পরিশ্রম করেন তাদের ক্ষেত্রে।
সবশেষে বলা যায়, ১০০ গ্রাম খেজুর শুধু ক্যালরির উৎস নয়, এটি ভিটামিন, খনিজ, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি প্রাকৃতিক ভাণ্ডার। সঠিক পরিমাণে খেলে এটি শক্তি যোগায়, হজমে সহায়তা করে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। তবে পরিমিতি বজায় রেখে খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ, যাতে খেজুরের পুষ্টিগুণ উপভোগ করা যায় কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই।


Comments
Post a Comment